বুধবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২৩ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
নতুন দায়িত্ব পেলেন উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন গুলশানে স্পা’র আড়ালে শাহ আলম ও দালাল আলাউদ্দিনের দেহ ব্যবসা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রার’ নাম পরিবর্তন রবিবার ৩ জেলায় সাধারণ ছুটি, সব মিলিয়ে ৪ দিন চীনা পণ্যে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র সারা দেশে সাংবাদিকদের উপর নির্যাতনের প্রতিবাদ ও শাস্তির দাবিতে জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মানববন্ধন অনুষ্ঠিত নরসিংদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা: ওজন ও পরিমাপ মানদণ্ড আইনে দুই প্রতিষ্ঠানের মালিককে জরিমানা এনসিপির পক্ষে নরসিংদীতে এড. শিরিন আক্তার শেলি এর গণসংযোগ হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে চট্টগ্রাম এয়ার পোর্ট ভিআইপি রোডে চলছে অবৈধ ব্যাটারী চালিত টমটম “মানছে না ট্রাফিক আইন” সৎ মা-ভাইদের হামলায় বাবার বাড়ি থেকে বিতাড়িত অসহায় মেয়ে ও তার মা.. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা ঘুরছে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে
ঠাকুরগাঁওয়ে দৌরাত্ম বাড়ছে ফাঁদ পেতে পাখি শিকারীদের

ঠাকুরগাঁওয়ে দৌরাত্ম বাড়ছে ফাঁদ পেতে পাখি শিকারীদের

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: হেমন্তে শীতের আগমনী বার্তা আসতে শুরু করেছে। কিছু দিন পরে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসতে শুরু করবে নানা প্রজাতির অতিথি পাখি।গ্রামাঞ্চলের পুকুর, নালা-ডোবাগুলোতে দেশীয় পাখিদের পাশাপাশি অতিথি পাখিদের ঘটবে বিচরণ। কিন্তু তার আগেই ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর বিলে ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে চলছে পাখি শিকার। এ যেন দেখার যেন কেউ, ফলে কিছুতেই রক্ষা হচ্ছেনা জীববৈচিত্র।

বন্য প্রাণীসংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী পাখি নিধন দন্ডনীয় অপরাধ এবং নিষিদ্ধ। এর জন্য কারাদন্ড ও অর্থদন্ড দেওয়া হয়ে থাকে অপরাধীদের। তারপরেও আইনের সঠিক বাস্তবায়ন ও সচেতনতার অভাবে সদরের রহিমানপুর বিলে খাবারের সন্ধানে ছুটে আসা নানা প্রজাতির পাখি ধরা পড়ছে শিকারীদের ফাঁদে। আবার এসব পাখি ফেরি করে বিক্রি হচ্ছে স্থানীয়হাট-বাজারে। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছেনা। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে এসব ফাঁদ পেতে পাখি শিকারীদের দৌরাত্ম। সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে এলাকার ঐতিহ্য ও দেশী নানা প্রজাতির পাখি।

গতকাল রবিবার সকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর বিলে দেখা যায় তিনজন পাখি শিকারি ফাঁদ পেতে প্রকাশ্যে অর্ধশতাধিক বক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন সময় ক্যামেরা দেখামাত্র তারা পাখি গুলোকে আড়ালের চেষ্টা করলেন। পরে তারা ছবি তুলতে দিয়ে বলেন, শীতের সময় মাঝে মাঝে বিভিন্ন এলাকায় ফাঁদ পেতে পাখি শিকার করে স্থানীয় পাখি ভোজন বিলাসীদের কাছে বিক্রি করি।

পাখি শিকারিরা হলেন- সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া এলাকার আব্দুর রশীদের ছেলে হামিদুর রহমান (৩৫), আইনুদ্দিনের ছেলে নুর ইসলাম (৪০) ও পাশের গ্রাম ধর্মপুরের ময়নুদ্দিনের ছেলে হৃদয় (৩৮)। এই পাখি শিকারিরা বস করা পাখির মাধ্যমে মুক্ত পাখিদের খাঁচায় বন্দী করে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঠাকুরগাঁওয়ের কয়েকটি বিল, নদী-নালা ও জলাশয় গুলোতে থাকাবর্ষা পানি কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে খাল-বিলে রয়েছে রোপা আমন ধান। এ সময় মাছ ও ধান খাওয়ার লোভেই নানা প্রজাতির পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে বিলে আসে। পাখি শিকার অপরাধ জানা সত্বেও বিভিন্ন স্থানে শিকারীরা জাল ও ফাঁদ পেতে নির্বিচারে পাখি শিকার করছে।

এক সময় মাছে সমৃদ্ধ ছিল সদরের রহিমানপুর বিল। তখন থেকেই দেশি ও পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল গড়ে ওঠে ওই বিলে। মাছের লোভে শীতের শুরু থেকে বকসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি খাবারের সন্ধানে দুর-দুরান্ত থেকে ছুটে আসত এই বিলে। আর রোপা আমনধান ক্ষেতে থাকা মাছ ছিল তাদের প্রধান খাদ্য।

এ প্রসঙ্গে ঠাকুরগাঁওয়ের রহিমানপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খেলাফোত হোসেন বলেন, আশির দশক পর্যন্ত মাছ আর পাখির আশ্রয় কেন্দ্র ছিল রহিমানপুর বিল। খাদ্যের সন্ধানে পাখির আনাগোনা ছিল বেশ লক্ষণীয়। এখন তা অতীত। কারণ বিল এখন পুকুরে পরিপূণ্য হয়ে গেছে। পুকুরের কারণে রহিমানপুর বিল আর আগের মতো নেই। কমেছে দেশী মাছের উৎপাদন ও পাখির আনাগোনা। তাছাড়া বিলে অনেক পুকুর থাকার কারণে পাখিরা মাছ নষ্ট করছে বলে পুকুরের মালিকরা পাখি শিকারীদের নিষেধ করে না।

ওই বিলের পাশে রায়পুর এলাকার কৃষক নাজমুল ইসলাম বলেন, এক শ্রেণীর লোভী মানুষ রহিমানপুর বিল থেকে নানা পন্থায় পাখি শিকার করে স্থানীয় হাট-বাজারে ফেরি করে বিক্রি করছেন। রাতের শেষ প্রহর থেকে ভোর পর্যন্ত তারা পাখি শিকার করে থাকেন। আমাদের জীববৈচিত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য পাখির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাখি নিধন রোধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ বেশি প্রয়োজন।

রহিমানপুর বিলের মৎস্য জীবি জগাই বলেন, সবাই হাটে ফেরি করে পাখি বিক্রি করে না। বেশি দামে এলাকার মানুষের কাছে তারা বিক্রি করেন। প্রতিটি বক ১শ টাকা থেকে ১শ ২০ টাকা দরে বিক্রি করে। শুধু রহিমানপুরের বিল নয় জেলার অনেক এলাকায় পাখি শিকারি আছে। অনেকে বিক্রি করে আবার অনেকে নিজে ভক্ষণ করে।

ঠাকুরগাঁও বন কর্মকর্তা হরিপদ রায় জানান, লোকবলের সংকটের কারণে সব দিকে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তাছাড়া সরকারি ভাবে পরিবহন সুবিধাও নেই। তারপরও সতর্ক রয়েছেন তারা।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ-আল-মামুন বলেন, পাখি শিকার জীববৈচিত্রের জন্য ক্ষতিকর। নিয়মিত অভিযান চলছে কোন ব্যক্তি যাতে পাখি শিকার করে হাট-বাজারে বিক্রি করতে না পারে সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com